
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ মে, ১৮৬১ ২৫ শে বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দে কলকাতার এক পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।রবীন্দ্রনাথ কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিকও বটে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে তার মাধ্যমে সাহিত্য ও সংগীতে যে পরিবর্তন আসে তা সত্যিই অতুলনীয়।
তিনি গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন । তার এই কাব্যগ্রন্থটিকে “গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ” রূপে বর্ণনা করেছেন নোভেল পাউন্ডশন।
তার বয়স যখন মাত্র আট বছর তখন থেকেই কাব্যরচনায় প্রবৃত্ত হন।
তার প্রথম সাহ্যিত্য কর্ম ১৮৭৭ সালে প্রকাশিত হয়।তার বয়স তখন মাত্র ষোলো বছর, ষোল বছর বয়সেই “ভানুসিংহ” ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়।তারপর এই বয়সেই প্রথম ছোটোগল্প ও নাটক রচনা করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তিনি একদিকে সাহ্যিতিক আবার দেশপ্রেমিকও বটে।তিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন ।
তার চিন্তাধারা ও তাঁর মতাদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর বিচিত্র ও বিপুল সৃষ্টিকর্ম এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতীর মাধ্যমে ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে তাঁর উপন্যাস, ছোটোগল্প, সংগীত, নৃত্যনাট্য, পত্রসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধসমূহ। তাঁর রচিত অন্যতম কিছু গ্রন্থ হল- গীতাঞ্জলি, গোরা, ঘরে বাইরে, রক্তকরবী, শেষের কবিতা ইত্যাদি।
তার লিখনি কাব্য, ছোটোগল্প ও উপন্যাস গীতিধর্মিতা, সহজবোধ্যতা, ধ্যানগম্ভীর প্রকৃতিবাদ ও দার্শনিক চিন্তাধারার জন্য প্রসিদ্ধ।
রবীন্দ্রনাথের রচিত গান আমার সোনার বাংলা ও জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারত রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা লাভ করে।
রবীন্দ্রনাথ তার পুরো জীবনে অসংখ্য নাটক,উপন্যাস,কবিতা কাব্যগ্রনন্থ রচনা করে গেছেন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ও অন্যান্য চাকরির জন্য তার রচিত গ্রন্থগুলো মনে রাখার টেকনিক দেওয়া হল-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস মনে রাখার কৌশল:
দুই বোন চোখে পানি নিয়ে ঘরের বাইরে বৌঠাকুররানীর সাথে যোগাযোগ করে। নৌকাডুবি গোরায় চার মালনন্ঝ ধরে চতুরঙ্গ রার্জষি শেষে গেলো নৌকা তুলতে।
১.গোরা ২.শেষের কবিতা ৩.চার অধ্যায় ৪.চতুরঙ্গ
৫.চোখের বালি ৬.দুই বোন ৭.মালঞ্চ ৮.রার্জষি
৯.ঘরের বাইরে ১০.যোগাযোগ ১১.বৌঠাকুররানীর হাট ১২.নৌকাডুবি
“ বৌ রা বালি নৌকাডুবে
পতি গোরা বাইরে ,
রঙ্গ যোগে শেষের বোন
মরল( /মলল) চারঅধ্যায়ে।”
১) বৌয়ের— বৌঠাকুরানীর হাট ২) চোখের— চোখের বালি ৩) চার— চার অধ্যায়
৪) নৌকাডুবি— নৌকাডুবি ৫) দুই বোন— দুই বোন ৬) করুনা— করুনা
৭) শেষে— শেষের কবিতা ৮) চতুর— চতুরঙ্গ ৯) রাজর্ষি— রাজর্ষি
১০) গোরা— গোরা ১১) ঘরেবাইরে— ঘরেবাইরে ১২) যোগাযোগ-যোগাযোগ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প সহজে মনে রাখার উপায়:
ছোট গল্প: পোস্টমাস্টার কাবুলিওয়ালা দেনা পাওনার কর্মফলে হৈমন্তির দিদির পত্র রক্ষা করতে পারল না
১। পোস্টমাস্টার ২। কাবুলিওয়ালা ৩। দেনা পাওনা ৪। কর্মফল ৬। হৈমন্তি ৭। দিদি ৮। পত্র রক্ষা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের গল্প সহজে মনে রাখার উপায়:
প্রেমের গল্প: দূর আশায় দৃষ্টিদান করে ল্যাবরেটরীর অধ্যাপক তার নষ্টনীড় জীবনের শেষের রাত্রির শেষ কথার সমাপ্তি টেনে স্ত্রীর কাছে পত্র লেখেন
১। ল্যাবরেটরী ২। অধ্যাপক ৩। নষ্টনীড় ৪। শেষ রাত্রি ৫। সমাপ্তি
৬। স্ত্রীর পত্র ৭। একরাত্রি ৮। দূর আশা ৯। দৃষ্টিদান
রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত নাটকগুলি মনে রাখার টেকনীক নিচের পংতির মধ্যে লুকিয়ে আছে:
“রাজা অচলায়তন চিরকুমারকে ডেকে রক্তকরবী মুক্ত মুকুট নিয়ে অরুনাচল অরুপরতনকে সঙ্গে নিয়ে কালের যাত্রায় বিসর্জন দিতে তাসের দেশে গেলেন ।”
১) রাজা-রাজা ২) অচলায়তন-অচলায়তন ৩) চিরকুমার-চিরকুমার সভা
৪) ডেকে –ডাকঘর ৫) রক্তকরবী-রক্তকরবী ৬) মুক্ত —- মুক্তধারা
৭) মুকুট—- মুকুট ৮) অরুণাচল— অরুণাচল ৯) অরুপরতন— অরুপরতন
১০) কালের যাত্রায়—- কালের যাত্রা ১১) বিসর্জন— বিসর্জন ১২) তাসের দেশে—- তাসের দেশ
তার এই অসংখ্য লেখনি বাংলার সাহিত্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। তাইত আজও রবীন্দ্রনাথ রয়েছে বাংলার প্রতিটা প্রান্তরে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্য গ্রন্থ মনে রাখার কৌশল
কবি বনফুলের কাছে ভানুসিংহ ঠাকুরের কথা বলে সোনার তরী চৈতালী চিত্রা রুপ নিলো। যা গীতাঞ্জলি বলাকায় পলাতকা পূরবী শেষ লেখায় আশ্রয় নিলে।
১. কবি-কাহিনী
২.বনফুল
৩. ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী
৪.সোনার তরী
৫. চৈতালী
৬.চিত্রা
৭. গীত
৮. বলাকা
৯.পলাতকা
১০. পূরবী
১১. শেষ লেখা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর দেওয়া অনুপ্রেরণা উপহার
১.জীবনানন্দ দাশের কবিতা সম্পর্কে বলেছেন চিত্ররুপময় কবি।
২.কবি সত্যেন্দনাথ দত্তকে ছন্দের জাদুকর বলে উপাধি দেন।
৩. ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কে ভাষাচার্য উপাধি দেন।
৪.বিহারীলাল চক্রবর্তীকে ভোরের পাখি উপাধি দেন।
৫.বিদ্যাপতির কাব্যকে রাজকন্ঠের মণিমালা উপাধি দেন।
১৮৯৮ সালে প্রথম বার আসেন ঢাকায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে যোগ দিতে। সম্মেলনটি হয়েছিল ঢাকার ক্রাউন থিয়েটারে। তাঁর সফর সঙ্গী ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ, যোগেন্দ্রনাথ চৌধুরী প্রমুখ।
১৯২৬ সালে দ্বিতীয় বার আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ঢাকাবাসীর আমন্ত্রণে। ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উদ্দেশ্যে সফরসঙ্গীসহ নারায়ণগঞ্জে পৌঁছেন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করেন। এ সময় ঢাকার বিভিন্ন সংঘঠনের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ।
১০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ কার্জন হলে তাকে সংবর্ধনা ভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জি. এইচ. ল্যাংলি করেন জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট ড. আর সি মজুমদার।
রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ
রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ ছিলেন পীরালি ব্রাহ্মণ (বিধর্মীদের সংস্পর্শে এসে জাত হারানো ব্রাহ্মণরা হলেন পীরালি ব্রাহ্মণ)। তাঁর পূর্বপুরুষ জগন্নাথ কুশারীকে পিরালী ব্রাহ্মণ মেয়ে বিয়ের দায়ে হিন্দু সমাজচ্যুত করা হয়।
তার ছেলে পঞ্চানন কুশারী ১৮ শতকের শুরুতে খুলনার দক্ষিণডিহি থেকে কলকাতার গোবিন্দপুরে এসে জেলে পাড়ার পুরোহিত হিসেবে কাজ করলে অনেকে ঠাকুর বলে ডাকেন।
আরও পড়ুন -বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) World Trade Organization
এ কাজের পাশাপাশি তিনি ইংরেজদের বাণিজ্য তরীতে দ্রব্য উঠা-নামানোর ঠিকাদারির কাজ করলে ইংরেজদের কাছেও ঠাকুর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং তাদের আনুকূল্য লাভ করেন।
তারই একজন উত্তর পুরুষ দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংরেজদের কাছ থেকে অর্থের পাশাপাশি প্রিন্স উপাধি লাভ করেছিলেন । এভাবে শত বছরের ব্যবধানে জেলেদের পুরোহিত থেকে কলকাতার প্রভাবশালী পরিবারে পরিণত হয়।
রবীন্দ্রনাথ স্মৃতি বিজড়িত জায়গা
রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের খুলনায়। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জামিদারি ছিল।
এ জমিদারী দেখার জন্যই রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসেছেন, অবস্থান করেছেন এবং সাহিত্য রচনা করেছেন।
আনোয়ারুল করিম তার ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘স্থায়ীভাবে থাকার সময় ব্যতীত রবীন্দ্রনাথ মোট ৫০ বার বাংলাদেশে এসেছেন।’
দক্ষিণডিহি : খুলনার ফুলতলা উপজেলার একটি গ্রাম। রবীন্দ্রনাথের মা সারদাসুন্দরী দেবীর জন্ম এই গ্রামে। তাছাড়া রবি ঠাকুরের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীও এই গ্রামের মেয়ে। তাদের বিয়েও হয়েছিল এই গ্রামে ।
শিলাইদহ : বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রাম। ১৮৮৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম শিলাইদহে আসেন। শিলাইদহ কুটিবাড়িতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছেন।
সেখানেই ‘সোনার তরী’ কাব্য রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ ছেড়ে শান্তি নিকেতনে উঠেন।
শাহজাদপুর : সিরাজগঞ্জ জেলার একটি থানা। ১৮৯০ সালে প্রথম জমিদারী এস্টেটে পরিদর্শনে শাহজাদপুরে আসেন।
পতিসর : নওগা জেলার আত্রাই উপজেলার একটি গ্রাম। ঠাকুর জমিদারির কালিগ্রাম পরগণার সদর কাচারি ছিল পতিসরে। ১৮৯১ সালে প্রথম পতিসরে আসেন। ১৯৩৭ সালে শেষবার পতিসর পরিদর্শন করেন।